কওমি সার্টিফিকেটের মূল্য কোথায়?—১৫ বছরের শিক্ষাও বিদেশে অচেনা।
ক্যালিগ্রাফি শিল্পি উসাইদ মুহাম্মদ
কাতারে আসার পর যেখানেই আবেদন করেছি—সবার প্রথম প্রশ্ন একটাই:
“হাই স্কুল সার্টিফিকেট আছে?”
“ব্যাচেলর সার্টিফিকেট আছে?”
না হলে “আলিয়ার সার্টিফিকেট?”
কিন্তু কওমির কোন সার্টিফিকেট?
হেফজ, মেশকাত, দাওরা, ইফতা—কেউ চেনে না, মানেও না।
“হাইয়াতুল উলইয়া” নাম শুনলে তো অনেকে সরাসরি হাসে।
১৫ বছর কাটালাম কওমিতে।
তবু আজ বিদেশে এসে মনে হচ্ছে—আমি যেন সার্টিফিকেটহীন একজন নিরক্ষর মানুষ।
তাহলে এই পুরো কারিকুলামের দাম কোথায়?
আমাদের মুরুব্বিরা কেন এত উদাসীন?
একজন ছাত্র বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে সে কোন সার্টিফিকেট দেখাবে?
আলিয়ার সার্টিফিকেট?
কিন্তু আলিয়ার পরীক্ষাই তো দিতে দেওয়া হয় না!
পরীক্ষায় অনুপস্থিত হলে সরাসরি বহিষ্কার।
স্কুল–কলেজে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই।
নিজেদের তৈরি বোর্ডেরও আন্তর্জাতিক কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।
যে সব মাদরাসা এসব সুযোগ রাখে—
তাদেরকে “গোমরাহ”, “ধ্বংস”, “বিদআত” বলা হয়।
মানুষকে নিরুৎসাহিতই করা হয়।
এই পোস্টটাও দিলে অনেকে আমাকে ‘ধ্বংস-মতবাদী’ বলবে—এটাই বাস্তবতা।
মুরুব্বিরা কি শুধু চান আমরা মসজিদ–মাদরাসার দেয়ালের ভেতরেই বন্দি থাকি?
একজন কওমি ছাত্র পিএইচডি করলে সমস্যা কোথায়?
উচ্চশিক্ষা নেওয়া কি দোষ?
বিশ্বের সব জায়গায় আলিয়া মাদরাসার সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য—
কিন্তু কওমির বহু শতাব্দীর পাঠ্যসূচি
শরহে বেকায়া, মেশকাত, দাওরা, হাইয়া—কোথাও কোনও পরিচিতি নেই।
নিজেকে কখনো কখনো খুব ছোট লাগে।
আল্লাহ কিছু যোগ্যতা হয়তো দিয়েছেন,
কিন্তু সার্টিফিকেট না থাকায় কোথাও আবেদন করার সুযোগই পাচ্ছি না।
স্রেফ “সার্টিফিকেট” নামে একটা কাগজ না থাকায়
একজন মানুষের যোগ্যতা, মেধা, পরিশ্রম—সবই শূন্য হয়ে যায়!
তাহলে কি সমাধানই নেই?
আমরা যেখানে আটকে আছি—
সেখানকার বাস্তব উত্তরটা হয়তো খুব কঠিন কিন্তু পরিষ্কার:
দাওরা–ইফতা শেষ করেই পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া।
তারপর মসজিদ–মাদরাসায় চাকরি।
এভাবেই জীবন কাটিয়ে দেওয়া।
কারণ আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের সার্টিফিকেটের কোনো মূল্য নেই—
এবং এই বাস্তবতা মুরুব্বিরা মানতেও চান না,
সমস্যা সমাধান করতেও চান না।